জানেন কি ‘বিজ্ঞাপন’ শব্দটি একটি পনেরো শতকের ফরাসি শব্দ। এর অর্থ হল সোজা কথায় নোটিস করা। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে আরও সোজা ভাষায় বললে বিজ্ঞাপন হল কোনও পণ্য বা পরিষেবা প্রচারের কৌশল। আশেপাশে চোখ মেললেই দেখা পাওয়া যায় বিভিন্ন রকমের চটকদার বাহারি বিজ্ঞাপনের। আসলে বিজ্ঞাপন তো শুধু প্রচারের কৌশল নয়, চোখ ধাঁধিয়ে বিভ্রান্ত করে দেওয়ার কৌশলও বটে। এই ডিজিট্যাল দুনিয়ায় তো রকমারি বিজ্ঞাপনের ঠ্যালায় মানুষ একেবারে নাজেহাল। কোথায় নেই বিজ্ঞাপন? আগেকার মতো রেডিও, টেলিভিশন থেকে শুরু করে বর্তমানের বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যম, নানারকমের ইভেন্ট, অ্যাপ সমস্ত কিছুই আটকে আছে বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায়। ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজ পড়তে গেলেও বিজ্ঞাপন, আবার রাতে ঘুমানোর সময় গান শুনতে গেলেও বিজ্ঞাপন। অর্থাৎ সমস্ত জায়গায় এই বিষয়টি একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে। এ যেন এক নেভার এন্ডিং লুপ। বেরোনোর উপায় নেই। আমরা অনেক সময় নাজেহাল হয়ে যাই। তবে হ্যাঁ, বিরক্তির পাশাপাশি বিজ্ঞাপন কিন্তু আমাদের বিভিন্ন পণ্য ও সেবা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য এনে দেয়, যা আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। উল্টোদিকে, বিভ্রান্তিমূলক বিজ্ঞাপনের ঠ্যালায় আপনি কিন্তু বিপদেও পড়তে পারেন। প্রাণহানির আশঙ্কাও থেকে যায় অনেক ক্ষেত্রে। আসলে বিজ্ঞাপন আমাদের আকৃষ্ট করে, আমাদের আবেগ আর লুকানো চাহিদাকে নাড়া দেয়। অনেক সময় কিছু বিজ্ঞাপনের শিল্পগুণ আমাদের মুগ্ধও করে বইকি! তবে যে সমস্ত বিজ্ঞাপন মানুষকে বিভ্রান্ত করে তার থেকে সাধু সাবধান!
আসুন জেনে নিই কোন ধরনের বিজ্ঞাপন বিভ্রান্তিমূলক ?
আজকাল বিজ্ঞাপনে পণ্য বা পরিষেবা সম্পর্কে বাড়িয়ে বলা বা দেখানো একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে যা নয় তাই বলা হয়। শিশু খাদ্য ও বাচ্চাদের পানীয়ও এর থেকে ছাড় পায় না। কোনও কোনও কোম্পানি তো আবার একধাপ এগিয়ে একইসঙ্গে টলার, স্ট্রঙ্গার ও সার্পার বানানোর দাবিও করে। আবার কেউ ঠাণ্ডা পানীয় খেয়ে তার জেরে দুনিয়াকে জয় করার স্বপ্ন দেখায়। আসলে বিজ্ঞাপনের ভুল বার্তা বা মিথ্যা তথ্যের প্রভাবের এমন অসংখ্য উদাহরণ আমাদের চারপাশে রয়েছে। যেমন ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে দেখানো হয়, মেয়ের ভালো বিয়ে থেকে শুরু করে ভালো চাকরি সব কিছুর জন্যই ফর্সা হতেই হবে। এবং সেই ক্রিম ব্যবহার করলে মাত্র কয়েক সপ্তাহেই কালো থেকে ফর্সা হওয়া সম্ভব। অনেকক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য বিভিন্ন অভিনেতা, অভিনেত্রী বা ক্রীড়াবিদদের ব্যবহার করা হয়, যাতে সেই বস্তু বা পরিষেবার গ্রহণযোগ্যতা সাধারণ মানুষের কাছে অনেকটাই বেড়ে যায়। অতএব, হেলথ ড্রিঙ্ক বা এনার্জি ড্রিংকই হোক বা ফর্সা হওয়ার ক্রিমই হোক, অথবা সাতদিনে ম্যাজিকের মতো টাকে চুল গজানোর ওষুধই হোক, এহেন রকমারি বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের চোখ কিন্তু জ্বলজ্বল করে ওঠেই। তাঁরা বিশ্বাসও করে ফেলেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেসব জিনিস বা পরিষেবা, ব্যবহার করার একটা সময় পরে তারা বুঝতে পারেন যে তাঁরা ডাহা ঠকে গিয়েছেন।
এবার আপনাদের জ্ঞাতার্থে কয়েকটা তথ্য জানিয়ে দিই। জানেন কি ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় বিধি অনুযায়ী সারোগেট অ্যাড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। “প্রিভেনসন অফ মিসলিডিং অ্যাডভার্টাইজমেন্ট এন্ড এন্ডর্সমেন্ট ফর মিসলিডিং এডভারটাইজমেন্ট ২০২২” শীর্ষক বিধিতে এই নতুন নিয়মের কথা বলা আছে।
যে সমস্ত বিজ্ঞাপন, গ্রাহকদের ‘অফার’ বা ‘বিনামূল্য’, এই সমস্ত কথা বলে প্রলোভিত করছে, সে বিজ্ঞাপনগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্র। বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের জরিমানা এমনকি বিজ্ঞাপনে থাকা সেলেবদেরও কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও, শিশুদের টার্গেট করে যে সমস্ত বিজ্ঞাপন আসে তাকেও নজরে রেখে বিধি লাগু হয়েছে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, কনজিউমার প্রোটেকসন অ্যাক্ট অনুযায়ী নিয়ম ভাঙ্গলে ১০লাখ থেকে ৫০লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানাও দিতে হতে পারে।
পরিশেষে, বাহারী বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে ভাসিয়ে দেবেন না। চোখ কান খোলা রাখুন, সদা সতর্ক থাকুন। আপনি যদি কখনো এরকম বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের পাল্লায় পড়ে প্রতারিত হয়েছেন, নির্দ্বিধায় জানান আমাদের। যাতে আগামীতে সেই বিষয়ে আর কাউকে প্রতারিত না হয়। আওয়াজ তুলুন।
বলো গ্রাহক। কাস্টমার রাইটস ম্যাটার!
Your Comment