“আমি চঞ্চল হে আমি সুদূরের পিয়াসী” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
বাঙালিরা বরাবরই ঘুরতে ভালোবাসেন। তাঁরা বরাবরই চঞ্চল এবং আক্ষরিক অর্থেই সুদূরের পিয়াসী। আর কথাতেই তো আছে, বাঙালিদের পায়ের তলায় সর্ষে। আর ঠিক এই কারণেই সুযোগ পেলেই তল্পিতল্পা গুটিয়ে বেরিয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে কখনও নিজের ওপরেই ভরসা, কখনও বা কোনও ট্রাভেল এজেন্সির ওপর ভরসা করে বেরিয়ে পড়া হয়। কিন্তু যদি দ্বিতীয়টি হয় সেক্ষেত্রে আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতার বেশিরভাগটাই নির্ভর করছে সেই নির্দিষ্ট ট্রাভেল এজেন্সির ওপর। কারণ এই বিজ্ঞাপনের বাহারি দুনিয়ায় কোনও কিছুর ওপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করেছেন কি ঠকেছেন!
ঠিক এক বছর আগের মার্চ মাসে এমনই এক অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল সল্টলেকের একটি ট্রাভেল সংস্থার বিরুদ্ধে। কম পয়সায় দেশ-বিদেশ ভ্রমণের লোভ দেখিয়ে তারা বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রলুব্ধ করেছিল আমজনতাকে। অনেক মানুষই ভরসা করে পুরো টাকা আবার কেউ বা অর্দ্ধেক টাকা জমাও করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে দেখা যায় ফোন অফ্ সঙ্গে অফিসও তালা বন্ধ।
ঠিক এরকমই আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল বারাসাতের এক স্কুল শিক্ষিকার সঙ্গে। অনলাইনে ভালো রিভিউ দেখেই তিনি যোগাযোগ করেছিলেন এক ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে। তারপর ট্যুর প্যাকেজ বাবদ প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকাও নেয় ওই সংস্থাটি। এমনকি গ্রাহকদের আস্থা অর্জনের জন্য বিভিন্ন গ্রাহকের পাঠানো রিভিউ, নিয়মিত হোয়াটস অ্যাপ স্ট্যাটাসেও আপলোড করত তারা। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের ফোনও সুইচড অফ্ পাওয়া যায় এবং ওই শিক্ষিকা থানায় অভিযোগ দায়ের করতে বাধ্য হন।
তাহলেই বুঝতে পারছেন তো এই ডিজিটাল যুগে দাঁড়িয়ে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে হলে, ‘উঠল বাই তো কটক যাই’ করতে গেলে হবে না। এখন যথেষ্ট সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। তাই ট্রাভেল এজেন্সি বাছাইয়ের আগে যে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখবেন:
১) অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি বাছাইয়ের আগে তাদের পেজে গিয়ে যাচাই করে নিন কতো পুরনো পেজ। কারণ ফেক হলে নতুন পেজ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
২) অনলাইন এজেন্সির ক্ষেত্রে রিভিউ চেক করলে সেগুলো খুঁটিয়ে দেখুন পুরনো না কি সদ্য দেওয়া রিভিউ।
৩) এজেন্সির কাস্টমার সার্ভিস সম্পর্কে খোঁজ নিন। প্রত্যেক ভ্রমণকারীর সঙ্গে তারা একই ব্যবহার করে কি না সেটিও জেনে নিন।
৪) যে যে স্পটে যেতে চান সেগুলোতে ওই এজেন্সি নিয়ে যাবে কি না আগেই ক্লিয়ার করে নিন। যদি নিয়ে যায় তার জন্য কতটা সময় বরাদ্দ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানুন।
৫)কোনও আপদকালীন অবস্থায় সেই এজেন্সি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে কি না অবশ্যই বুঝে নেবেন।
৬)শিশু, বয়স্ক এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয় এবং অসুস্থ হয়ে পড়লে যে সমস্ত বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন, সেগুলো সম্পর্কে আগেভাগেই খোঁজ নেবেন।
৭)ট্রাভেল এজেন্সির ম্যানেজার সম্পর্কেও খোঁজ নেবেন। অনেক সময় অদক্ষ ম্যানেজারের পাল্লায় পড়ে হিতে বিপরীত হতে পারে।
৮) সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনার কোনও পরিচিত, বন্ধু – বান্ধব, আত্মীয়-পরিজন বেড়িয়ে এসেছে এমন কোনো ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তবে অবশ্যই তার আগে বিস্তারিত এবং খুঁটিনাটি সহযোগে তাঁদের অভিজ্ঞতা জেনে নেবেন।
রোজকার ডালভাতের জীবনে আমাদের সবারই মাঝে মধ্যে ঘুরতে যেতে ইচ্ছে হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু খেয়াল রাখবেন সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা যেন সুখকর হয়। বর্তমানের ডিজিটাল দুনিয়ায় অনলাইন জালিয়াতির ঘটনাও যেমন আকছার ঘটছে আবার ভালো এজেন্সির সঙ্গে গিয়ে অনেক সুন্দর অভিজ্ঞতাও অর্জন হয়েছে অনেকের। কারণ ‘কালো ‘ থাকলে ‘আলো’ও থাকবে। আর হ্যাঁ, এই সংক্রান্ত কোনও ভালো বা খারাপ অভিজ্ঞতা হয়ে থাকলে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন। মনে রাখবেন, আমাদের প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা প্রত্যেকের সম্পদ। এবার থেকে মন খুলে ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করুন, শুধু একটু চোখ-কান খোলা রাখবেন যাতে আপনার আনন্দে কেউ ব্যাঘাত না ঘটাতে পারে। আসলে, সচেতন হলে তবেই এসব জালিয়াতি রুখে দেওয়া সম্ভবপর হয়ে উঠবে।
Your Comment