Aug 10, 2023 618 views

সাবধান! আপনি হ্যাকারের ফাঁদে পড়ছেন না তো

Category: Blog

২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছিল করোনা মহামারী। আর ঠিক তার পর থেকেই বিপুল চাহিদা বেড়েছে, ‘ঘরে বসে কাজ’ অর্থাৎ ওয়ার্ক ফ্রম হোমের। যেহেতু এখন যুগটা ডিজিটাল তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই  যে কোন জায়গা থেকেই অনলাইনের মাধ্যমে কাজ করা সম্ভব। আর এভাবেই, একদিকে যেমন বেড়ে চলেছে এই ওয়ার্ক ফ্রম হোম কাজের চাহিদা, ঠিক তেমনই অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন অভিনব উপায়ে জাল বিছিয়ে চলেছে অনলাইন দুর্নীতি। দেশে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে সাইবার প্রতারণার ঘটনা। জালিয়াতরা নানান উপায়ে বিভিন্ন টোপ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে আমজনতার টাকা।  এর মধ্যে অন্যতম একটি টোপ হলো চাকরির টোপ। বর্তমানে এই ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা পার্ট টাইম চাকরির স্ক্যাম দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই এর ফাঁদে পা দিয়েছেন এবং লাখ লাখ টাকা হারিয়েছেন।

কয়েকদিন আগেই সাইবার প্রতারকের ফাঁদে পড়েছিলেন নয়ডার এক মহিলা। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল হোয়াটসঅ্যাপে। প্রতারকেরা তাকে চাকরির লোভ দেখিয়ে বলে, ই-কমার্স ওয়েবসাইটের ইউটিউব ভিডিওগুলি লাইক, শেয়ার এবং সাবস্ক্রাইব করলেই বাড়িতে বসে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করতে পারবেন। এরপর তাকে একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করে কয়েকটি ইউটিউব ভিডিও লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার করতে বলা হয়। বিশ্বাস অর্জনের জন্য প্রাথমিকভাবে ওই মহিলার একাউন্টে কিছু টাকাও দেওয়া হয়। ঠিক তারপরেই নতুন করে বেশ কয়েকটি ইউটিউব ভিডিও পাঠানো হয়। সেগুলিতে লাইক করলেই মহিলার একাউন্ট থেকে খোয়া যায় ৪ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা।  আবার সম্প্রতি পুনের এক বাসিন্দার সঙ্গেও এমনই দুর্নীতি হয়েছে। পার্ট টাইম চাকরির মেসেজ পেয়ে তিনি খুইয়েছেন প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা।

এমনকি, পুনের এক ৫৬ বছর বয়সী বিজ্ঞাপন চিত্র নির্মাতাকে ঠকিয়ে ৯৬ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জালিয়াতরা। তবে এক্ষেত্রে গল্পটা একটু অন্য। প্রথমে একদিন উল্লেখিত ব্যক্তিকে টেক্সট মেসেজে পার্ট টাইম চাকরির অফার দেওয়া হয়। এরপর রিপ্লাই করলে একটি চ্যাট গ্রুপে যোগ দিতে বলা হয় তারপর ওয়েলকাম বোনাস হিসেবে তাকে ১০ হাজার টাকাও দেওয়া হয়। এবং একটি ট্রাভেল এজেন্সির রেটিং এবং রিভিউ লেখার কাজ দেওয়া হয়। এই কাজের জন্য তাকে প্রথমে দুটো ভাগে কিছু টাকা দিতে বলে জালিয়াতরা সেই টাকা সহ বেশ কিছু বাড়তি টাকা তাকে ফেরত দেয়। এভাবেই বিশ্বাস অর্জন করে পরের বার মোটা অঙ্কের টাকা চাওয়া হয় কিন্তু সেই টাকা আর ফেরত পাওয়া যায় না।

তাই ফোনে এমন মেসেজ এসে থাকলে এখনই সাবধান হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়াও, পরিশ্রম ছাড়াই পারিশ্রমিকের লোভ করলে সর্বশান্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। সাইবার জালিয়াতরা এসব ক্ষেত্রে টার্গেট করে সাধারণত শিক্ষিত গৃহবধূ, ছাত্র-ছাত্রী, বেকার যুবক-যুবতী, যারা বাড়তি রোজগারের কথা ভাবেন।

তাই নিম্নলিখিত বিষয়গুলি দেখলে এখনই সাবধান হোন।

১) সাইবার জালিয়াতরা যখন আপনাকে কাজ অফার করবে তখন তারা আপনার কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে কি না তা জিজ্ঞেস করবে না।

২) এরা সাধারণত কম সময়ে কম কাজ করে, বেশি পরিমাণ মাইনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

৩) এই সমস্ত কাজের বিজ্ঞাপনে ‘ কম সময়ে রোজগার করুন ‘, ‘বাড়িতে বসেই কম সময়ে মোটা টাকা আয় করুন’ – এরকম প্রলোভন দিয়ে থাকে।

৪) এদের ইমেল আইডি সাধারণত ব্যক্তিগত হয়।

এই অনলাইনের দুনিয়ায় এবার অত্যন্ত সাবধান হওয়ার সময় এসেছে। না হলে আপনার কষ্টার্জিত অর্থ বিফলে যাওয়া শুধুমাত্র মুহূর্তের অপেক্ষা। তাই এই সস্তার প্রলোভনে পা দেওয়ার আগে জানুন, ভাবুন এবং সতর্ক থাকা অভ্যেস করুন। সচেতন নাগরিক হয়ে উঠুন। আর এমন কোনো প্রতারকের পাল্লায় পড়লে উপভোক্তা সুরক্ষা বিভাগে অভিযোগ জানান। প্রতারিত হওয়ার বিশেষ কোনও অভিজ্ঞতা থাকলে সেটাও জানান। যাতে প্রত্যেকে সচেতন হয়ে ওঠেন। মনে রাখবেন প্রতারকের ফাঁদে পা দেওয়ার চাইতে আগেভাগেই, সচেতন থাকা জরুরি এবং সচেতন করাও জরুরি।

Your Comment

Related Post